পৃথিবীতে এমন অনেক বস্তু রয়েছে, যাদের আকার আছে। যেমন-ঈশ্বরের সৃষ্ট সকল জীব- মানুষ, জীবজন্তু ও গাছপালা। আবার অনেক কিছু আছে, যেগুলোর আকার নেই। যেমন বায়ু, আলো, শব্দ, গন্ধ ইত্যাদি।


ঈশ্বরের কোনো আকার নেই। ঈশ্বর নিরাকার। তাঁকে দেখা যায় না। কিন্তু আমরা তাঁর অস্তিত্ব অনুভব করি।
তবে ঈশ্বর সর্বশক্তিমান। তিনি নিজ অসীম ও অনন্য শক্তির বলে যে কোনো আকার ধারণ করতে পারেন। ঈশ্বরের সাকার রূপ নানা ভাবে প্রকাশ পেয়েছে।
এক. ঈশ্বর নিজেকে বা নিজের অংশবিশেষকে সাকার রূপ দান করেন। এ রূপগুলো হলো অবতার ও দেব-দেবী।
দুই. ঈশ্বর নিজেই জীবের মধ্যে যখন আত্মা রূপে অবস্থান করেন, তখন তাঁকে জীবাত্মা বলা হয়।
অবতার
যখন ধর্মের গ্লানি উপস্থিত হয় অর্থাৎ অন্যায় অবিচারে বিপর্যস্ত হয় মানবজীবন এবং অধর্মের অভ্যুত্থান ঘটে তখন ঈশ্বর কোনো না কোনো রূপ ধারণ করে পৃথিবীতে অবতরণ করেন। অবতরণ শব্দটির অর্থ নেমে আসা। ঈশ্বর বিশেষ উদ্দেশ্যে পৃথিবীতে অবতরণ করেন বলে তাকে অবতার বলা হয়। যেমন- ঈশ্বর ত্রেতাযুগে রামরূপে অবতীর্ণ হয়েছিলেন। রাম অবতারে তিনি রাবণসহ দুর্বৃত্তদের দমন করে ধর্ম বা ন্যায় ও সত্যের প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। দ্বাপর যুগে ঈশ্বর বা ভগবান স্বয়ং শ্রীকৃষ্ণরূপে নেমে এসেছিলেন। অন্যান্য অবতার ঈশ্বরের অংশ। আর শ্রীকৃষ্ণ ঈশ্বরের পূর্ণ অবতার। তাই বলা হয়েছে- 'কৃষ্ণস্তু ভগবান্ স্বয়ম্'-শ্রীকৃষ্ণ স্বয়ং ভগবান।

দেব-দেবী
ঈশ্বরের কোনো গুণ বা শক্তি যখন রূপ বা আকার ধারণ করে সাকার হয়ে ওঠে এবং বিশেষ গুণ, শক্তি বা মহিমা প্রকাশ করে তখন তাঁকে দেবতা বা দেব-দেবী বলে। অর্থাৎ দেব-দেবীরা ঈশ্বরের বিশেষ গুণ বা শক্তির সাকার রূপ। যেমন- ব্রহ্মা সৃষ্টির দেবতা, বিষ্ণু রূপে ঈশ্বর জীবজগৎকে রক্ষা ও প্রতিপালন করেন, শিব রূপে তিনি ধ্বংস করে পৃথিবীর ভারসাম্য রক্ষা করেন।
অপরদিকে দুর্গা শক্তির দেবী, সরস্বতী বিদ্যার দেবী, লক্ষ্মী ধন-সম্পদের দেবী ইত্যাদি। যেহেতু দেব-দেবীরা ঈশ্বরের অংশ, তাই দেব-দেবীদের সন্তুষ্ট করলে ঈশ্বর সন্তুষ্ট হন।
জীবাত্মা
ঈশ্বর যখন জীবের মধ্যে আত্মারূপে অবস্থান করেন, তখন তাঁকে জীবাত্মা বলে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর জীবের মধ্যে ঈশ্বরের অবস্থান সম্পর্কে তাঁর একটি কবিতায় বলেছেন,
'সীমার মাঝে অসীম তুমি বাজাও আপন সুর
আমার মধ্যে তোমার প্রকাশ তাই এত মধুর।'
অর্থাৎ দেহের সীমায় জীবাত্মারূপে পরমাত্মা বা ঈশ্বর বিদ্যমান থাকেন। স্বামী বিবেকানন্দও বলেছেন যে,
ঈশ্বর বহুরূপে আমাদের সম্মুখেই আছেন। এ বহুরূপ বলতে জীবকেই নির্দেশ করা হয়েছে।
সুতরাং দেখা যাচ্ছে, ঈশ্বর নিরাকার; কিন্তু তিনি সাকার রূপ ধারণ করতে পারেন। তাঁর সাকার রূপগুলো হচ্ছে-অবতার, দেব-দেবী ও জীব। কিন্তু ঈশ্বরের এসকল সাকার রূপ আলাদা কিছু নয়। সব সাকার রূপ একই ঈশ্বরের বিভিন্ন প্রকাশ। ঈশ্বর এক এবং অদ্বিতীয়।
| একক কাজ: ঈশ্বরের সাকার রূপের দুইটি গুণ চিহ্নিত কর। |
Read more